মাইন্ডফুলনেস কী?

ব্যায়াম যেমন শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তেমনি মাইন্ডফুলনেস একটি দক্ষতা যা মনকে সুস্থ রাখে। মাইন্ডফুলনেস আমাদের সেরাটা পারফর্ম করতে সাহায্য করে। জীবনের উত্থান-পতনগুলোকে খুব দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতেও সাহায্য করে।

মাইন্ডফুলনেস আমাদের ইচ্ছেমত যেকোন বিষয়ের মনোযোগ দেওয়া শেখায়। এর ফলে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। এজন্যই আমরা মাইন্ডফুলনেসের বাংলা আর্থ করেছি- মনোযোগ। মন মানে ‘মন’ আর যোগ মানে ‘এক হওয়া’। আপনি যখন যা করছেন যদি তার প্রতি ১০০% মনোযোগ দেন তখন সেটা আর আপনার থেকে আলাদা কিছু না।‌ এটা হলো এক হওয়া। এটাই হলো মাইন্ডফুলনেস।

প্রোডাক্টিভ হওয়া কিংবা দুশ্চিন্তা অনুভব করা দুটোরই উৎস মনোযোগ। নিজেকে সুখী বা দুঃখী অনুভব করারও উৎস মনোযোগ। মানে হচ্ছে আপনি যেখানে মনোযোগ দেন সেটাই আপনার সঙ্গে যোগ হতে থাকে।

তাই প্রথমেই জানতে হবে আপনার মন সবসময় কোন দিকে যোগ করছেন? আপনি কি বেশিরভাগ সময় দুশ্চিন্তা করেন, নাকি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ভোগেন? নাকি খারাপ পরিস্থিতিতেও আপনি প্রোডাক্টিভ কিছু দেখতে পারেন?

কোনটা আপনি করেন বা আপনার মনোযোগ কোন দিকে তার ওপর নির্ভর করে আপনার কোয়ালিটি অব লাইফ। আপনি কেমন জীবন চান অথবা কেমন জীবনে আছেন সেটা আপনার পরিস্থিতি নির্ধারণ করে না, নির্ধারণ করে আপনার মনোযোগ।

আলহামদুলিল্লাহ খুব সুখে আছি!’ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা যেকোন অনুগ্রহে  সন্তুষ্টি প্রকাশ করাই মুসলিমদের জন্য মাইন্ডফুলনেসের মূল ভিত্তি। অকৃতজ্ঞ মানুষ কখনো সুখী এবং সফল হতে পারে না।

বিজ্ঞান এটা প্রমাণ করেছে যে, সবচেয়ে বেশি আনন্দে ও শান্তিতে থাকাকালীন সময়েই মানুষের মস্তিস্ক সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। এই সময়েই মানুষ যেকোন কাজে সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, 

“… …  তোমরা কৃতজ্ঞ হলে, আমি অবশ্যই তোমাদের আরও দেব… …।” সুরা ইব্রাহিম, আয়াত-৭।

সুতরাং আপনি যদি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুব সুখে আছি’! এটিই তো আল্লাহর কাছে প্রকৃত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। তাই নয় কি? 

কৃতজ্ঞ হলেই কেবল আপনার মন কেন্দ্রীভূত হবে। অন্যথায় আপনার মন নানা বিকল্প দেখতে থাকবে। এ কারণেই মানুষের মনের শক্তি কমে যায়। 

বিষয়টি আরো সহজ করতে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সূর্যের আলো সবখানে ছড়িয়ে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ দেয়। যখন কেউ ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে সূর্যের আলোকে কেন্দ্রীভূত করে তখন এর শক্তি লক্ষ কোটি গুণ বেড়ে যায়। মুহূর্তেই আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনও মনের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় লক্ষ-কোটি গুণ। 

আপনি হয়তো ইতোমধ্যে এটি উপলব্ধি করেছেন, আপনি যখন কোনো কাজ পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করেন তখন খুব তাড়াতাড়ি ও দক্ষতার সাথে সে কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন। 

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা এটি সবসময় করতে পারি না। এই যে আপনি এখন আমাকে শুনছেন; কিন্তু আপনার মন হয়তো পড়ে রয়েছে অন্য কোথাও। আমাদের সবারই এমন হয়; শরীর হয়তো একটি কাজ করছে কিন্তু মন ভাবছে অন্য কিছু। এখনই একবার পরীক্ষা করে দেখুন আপনিই এর প্রমাণ পাবেন।

এই বইয়ের উদ্দেশ্য হলো, মনের মেঘগুলো দূর করে আপনার মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা। এটি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি। জিমে গিয়ে যেমন আমরা আমাদের পেশিকে শক্তিশালী করি এটিও ঠিক তাই।

 

 

নিয়মিত সঠিক উপায়ে প্রতিদিন মাত্র ৫মিনিট অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি এর উপকারিতা লক্ষ করবেন ইনশাআল্লাহ। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *