কীভাবে অনুশীলন করতে হয় মাইন্ডফুলনেস?

আপনি এই মুহূর্তে যে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন কেবল সেদিকেই মনোযোগ দিন। নাকের ভেতর দিয়ে প্রবেশকৃত বাতাসের শীতলতা, বুক প্রসারিত হওয়া বা তলপেটের ফুলে ওঠা খেয়াল করুন। শ্বাস ছেড়ে দেওয়ার সময় নাক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বাতাসের উষ্ণতা, বুক কিংবা তলপেটের নেমে যাওয়া খেয়াল করুন।

 

সচেতন ভাবে এ কাজটি করাই হলো মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনের প্রধান কাজ। এটিকে বলা হয় মাইন্ডফুল ব্রিদিং পদ্ধতি।

দেখুন, মাছ যেমন পানিতে বাঁচে, মানুষ তেমনি বাঁচে বাতাসে। আমাদের জীবন শুরু হয় শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে। শেষ হয় শ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে। শ্বাস সত্যিকার অর্থেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকমভাবে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। আপনি যখন দৌড়ান তখন একভাবে শ্বাস গ্রহণ করেন, যখন আপনি কাঁদেন অন্যভাবে শ্বাস গ্রহণ করেন। আবার যখন খুশিতে থাকেন তখন আপনি অন্যভাবে শ্বাস গ্রহণ করেন। এটি আমাদের শরীর জন্মগতভাবেই জানে। আপনিও যদি জানেন কীভাবে শ্বাস নিলে সবসময় এনার্জিতে ভরপুর ও সুস্থ থাকবেন এবং যদি সে পদ্ধতিতে শ্বাস নেন তবে আপনার সঙ্গে সবসময়ই এটি ঘটবে। এই প্রশিক্ষণ আপনাকে বিভিন্নভাবে শ্বাস নেওয়া শেখাবে।

 

মাইন্ডফুলনেস প্রতিমুহূর্তেই চর্চা করা যায়। যেমন, কারো কথা শোনা, নামাজ পড়া, দাঁত ব্রাশ করা, গোসল করা, খাবার খাওয়া, হাঁটা, অথবা যেকোনো কাজ সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করাই মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনের অংশ।

 

দ্রুত ও লক্ষণীয় ফলাফলের জন্য আপনাকে দিনে দুবার মাত্র ৫ মিনিট করে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন অনুশীলন করতে হবে। প্রথমে দিকে কঠিন মনে হলেও চর্চার ফলে এটি সহজ ও আনন্দময় হয়ে উঠবে। আমি আপনাকে শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি এটি আপনার জন্য কাজ করবে।

মনে রাখবেন, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের তিনটি ধাপ।

 

আরাম করে বসা: বসার জন্য একটি শান্ত এবং আরামদায়ক জায়গা খুঁজুন। আপনি একটি চেয়ার, কুশন বা মেঝেতে বসতে পারেন।

 

গভীর শ্বাস নেওয়া: আপনার চোখ বন্ধ করুন, একটি গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।

 

বর্তমান মুহূর্তের সচেতন হওয়া: আপনার এই মুহূর্তের শ্বাসের প্রতি আপনার মনোযোগ আনুন এবং আপনার শরীরের ভিতরে এবং বাইরে বাতাস চলাচলের স্পর্শের উপর ফোকাস করুন। অন্ততপক্ষে তিন মিনিটের জন্য আপনার শ্বাসের উপর আপনার ফোকাস ধরে রাখার চেষ্টা করুন।

 

এ সময় যদি আপনার মন অন্য কোথাও ঘুরপাক খায়, একটু মুচকি হাসুন আবার আপনার ফোকাসকে আপনার শ্বাসে ফিরে আনুন। কাজ আপনার এটুকোই।

 

পাঁচ মিনিট শেষ হয়ে গেলে, আরও একটি গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। তারপর, আপনার চোখ খুলুন এবং আপনার কাজে মনোযোগ দিন।

 

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন একটি অভ্যাস, এবং যেকোনো অনুশীলনের মতো, আপনি এটি যত বেশি করবেন, ততই আপনি এটিতে আরও ভালভাবে পাবেন। এটি এমন কিছু নয় যা আপনাকে ‘নিখুঁত’ করতে হবে। এটি কেবল বর্তমান মুহূর্ত সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আপনার শ্বাসের উপর ফোকাস রাখার চেষ্টা করার পাশাপাশি আপনার মনকে যখন এটি ঘুরে বেড়ায় তখন ফিরে আনার বিষয়ে।

 

প্রতিবার মেডিটেশন শেষে আপনি প্রফুল্ল এবং আনন্দ অনুভব করবেন। তবে অনুশীলনের কথা মনে রাখা এবং নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন। তিনটি কাজ এখনই করলে আপনি অনুশীলন নিয়মিত চালিয় যেতে পারবেন বলে আশা করতেই পারেন:

১. প্রতিদিন মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন করার জন্য নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করুন।

২. একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন এবং

৩. একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুন।

একটি নতুন অভ্যাস তৈরী হওয়ার জন্য সময় এবং স্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *