হিলিং স্ট্রেস উইথ মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন

অনেক সময় এমন হয় আমাদের খুব ক্লান্ত লাগে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না কেন এমন হচ্ছে? স্ট্রেস,  ডিপ্রেশন ও এনজাইটি হতে পারে এর কারণ।

দিনে কতবার কতটা সময় আপনি ক্লান্ত, স্ট্রেসড, অবসাদগ্রস্ত অনুভব করেন? আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে? সবকিছু বিরক্তিকর লাগে?

যখন আপনি এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, তখন নিজেকে সতর্ক কিংবা উত্তেজিত মনে করেন কি?

 

হয়তো আপনি অনেক পরিশ্রম করেন। দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করেন অথবা একই সাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করেন। এতে স্ট্রেস আরো বাড়ে, আপনার উপর দিয়ে ধকল যায়।

মনোবিজ্ঞানী ও লেখক ড. রিক হ্যানসেন এই অবস্থাকে মানুষের জন্য ‘রেড জোন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

আমরা যখন রেড জোনে থাকি তখন আমাদের দেহে “ফাইট ও ফ্লাইট” প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়। যেটি খুবই শক্তিশালী সিস্টেম। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। এই প্রতিক্রিয়ার অন্য একটি নাম হলো- একিউট স্ট্রেস রেসপন্স।

‘ফাইট ও ফ্লাইট’ রেসপন্স একটি অসাধারণ সার্ভাইভাল পদ্ধতি যা শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে মানুষকে স্বাভাবিক থাকতে সহায়তা করে। এটি আমাদের এই চাপ থেকে পালানোর পথ খুজতে সাহায্য করে। নইলে চাপের মুখে স্বাভাবিক থাকতে সহায়তা করে।

অতীতেও আমাদের পূর্বপুরুষেরা নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন যা তাদের  বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে এবং তারা নিরাপদ থেকেছে। আমাদের এইভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে, বিপদ বা শঙ্কা দেখলে আমরা ভয় প্রকাশ করবো, সেটি শারীরিক বা মানসিক যে অবস্থায়ই হোক না কেন।

Image by stockking

বর্তমানে আধুনিক সভ্য সমাজের মানুষেরা, নিজেদের শঙ্কা প্রকাশের বদলে মনের ভেতর চেপে রাখাই ভালো মনে করেন। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে লজ্জা বোধ করেন কিংবা অন্য কোনো সমস্যার আশঙ্কা করেন।

 

এসব আশঙ্কা যে কোনো কারণে হতে পারে। অন্যরা আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে বা বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন কিনা এসব নিয়েও আপনি মানসিক চাপে পড়তে পারেন।

 

আধুনিক যুগের আশঙ্কার কারণ হিসেবে আমরা আরো অনেক কিছুকেই বিবেচনা করতে পারি। কর্মক্ষেত্রে চাপ বেড়ে গেলে তা ম্যানেজ করা, পরিবার মেইনটেইন করা, ব্যক্তিগত জটিলতাসমূহের সমাধান করা। এসব ঘটনা ফাইট ও ফ্লাইট রেসপন্সকে সক্রিয় করে তুলতে পারে।

রেড জোনে থাকাকালীন আমরা সাধারণত আমাদের ভয়, আশঙ্কা প্রকাশ করে ফেলি। কারণ, আমাদের প্রকৃতিই এমন যে, ভয় পেয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাব। বিপদে শঙ্কা প্রকাশ করব, আমাদের রাগেরও বহিঃপ্রকাশ হবে।

 

আমাদের মাঝে যখন ফাইট ও ফ্লাইট রেসপন্স সক্রিয় হতে শুরু করে তখন শরীরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ইমোশনালি আমরা তখন উদ্বিগ্ন হই, মেজাজ খিটখিটে হয়, অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকি, অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করি, কোনো বিষয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাই, কাজে মন দিতে পারি না, ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবতেও পারি না। এসব বিষয় আমাদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায়।

 

ড. রিক হ্যানসেন বলেন, “আমাদের এই রেড জোন থেকে বের হয়ে গ্রিন জোনে যাওয়ার উপায় বের করতে হবে।”

 

গ্রিন জোন হলো শরীর ও মস্তিস্কের বিশ্রামের জন্য সহায়ক একটি অবস্থা। শরীরকে সবসময়ই গ্রিন জোনে রাখতেই এত এত সিস্টেম কাজ করে। শরীরকে শক্তি দেয়, মেরামত করে যেন শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালিত হয়। রেড জোনে থাকলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আর গ্রিন জোনে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 

আমরা যখন শান্তিপূর্ণ কোনো পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাই, মন শান্ত থাকে এবং মনের ভারসাম্য বজায় থাকে তখন আমরা আরো ভালো রেসপন্স করতে পারি।

যাই হোক, এই রেড জোন এবং গ্রিন জোন কাল্পনিক হলেও এদের গুরুত্ব অনেক বেশি। সবসময় রেড জোনে থাকা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। রেড জোনে থাকাকালীন আমরা খারাপ অনুভব করি। এটি আমাদের জন্য সুখকর নয়। আমাদের সিস্টেমকে রেড জোনে বেশি সময় কাটানোর মত করে তৈরি করা হয়নি।

 

অন্যদিকে গ্রিন জোনে থাকলে আমরা ভালো অনুভব করি। গ্রিন জোন আমাদের জন্য উপকারি। এজন্য আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যে, আমরা অধিকাংশ সময় আসলে কোন জোনে থাকি।

গ্রিন জোনে থাকার জন্য আমাদের কিছু উপায় খুঁজতে হবে। যেমন, নিজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, অন্যদের সাথে কানেক্টেড থাকা। কিসের জন্য আমরা মানসিক চাপে রয়েছি তা খুঁজে বের করা।

এ বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করতেই এই প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে।

আমরা প্রোগ্রামটিকে ৩টি সেকশনে ভাগ করেছি: রেড জোন, এম্বার জোন এবং গ্রিন জোন। ৩টি ভিন্ন ধরনের মেডিটেশন নিয়ে এই সেকশনগুলো গঠিত।

 

রেড জোনের এক্সারসাইজগুলো আপনার স্ট্রেসড, ক্লান্ত অনুভুতির সময় মেন্টাল সাপোর্ট দিতে সাজানো হয়েছে। এগুলো কম সময়ের ছোট ছোট এক্সারসাইজের মাধ্যমে আপনাকে রেড জোন থেকে বের হতে সাহায্য করবে।

 

আপনি হয়তো কঠিন কোনো সিচুয়েশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, অতীতের কোনো স্মৃতি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, তা থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু মাথায় বার বার সেই চিন্তা ফিরে আসছে। আপনি মানসিকভাবে ভেঙে পরছেন।

 

এম্বার জোনের মেডিটেশন আপনাকে এক্ষেত্রে সহায়তা করবে। যখন আপনি রেড জোনের মত তীব্র না তবে হালকা বিরক্ত, ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত হবেন, তখন এই এক্সারসাইজ আপনাকে বেটার ফিল করতে সাহায্য করবে।

গ্রিন জোনের মেডিটেশন আপনার সাহস, শক্তিকে আরো উন্নত করার জন্য কাজ করবে এবং কীভাবে আপনি আপনার স্ট্রেস, অবসাদ, ক্লান্তিকে মোকাবেলা করবেন সে বিষয়ে সাহায্য করবে।

এসব মেডিটেশন আপনার নিরাপত্তা, শক্তি, আত্মতৃপ্তি বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। আরেকটি সুবিধা হলো, আপনি আপনার সময়-সুযোগ অনুযায়ী এই মেডিটেশনগুলো প্র‍্যাক্টিস করতে পারবেন।

তাই স্ট্রেস বা শান্তি যা-ই  অনুভব করেন না কেন, সবক্ষেত্রেই মেডিটেশনের বিকল্প নেই। আপনার স্ট্রেস কোন লেভেলে আছে তা জানতে আমাদের স্ট্রেস ক্যালকুলেটরে গিয়ে পরীক্ষা করে আসুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *